সুনন্দা ঘোষ , এক্সপোস ডেস্ক :- কোরোনা নিয়ে সাধারণ মানুষদের চিন্তার শেষ নেই। আর সেই নিয়েই মানুষের উড়ে গেছে রাতের ঘুম। অতিরিক্ত চিন্তা করে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না তা সত্বেও মানুষের উদ্বেগের কমতি নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে , যোগা মেডিটেশন করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে। এছাড়াও এই ব্যাপার নিয়ে বেশি ভাবলে মাস ছয়েকের মধ্যে জিএডি বা জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শত চেষ্টা সত্ত্বেও মিলছে না উদ্বেগ থেকে মুক্তি।তাই নতুন মানুষের মনে বাসা বাঁধছে অ্যাংজাইটির।
উদ্বেগ জিনিস টা এতটাই খারাপ যার জেরে সাধারণ মানুষ ভাবতে শুরু করে, তার সাথে যা হবে সব খারাপ হবে অর্থাৎ মানুষ নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনায় বশবর্তী হয়ে পড়ে। এমনকি ভালো কিছুর মধ্যেও মানুষ তখন খারাপ জিনিসকেই খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন। স্বাভাবিক জীবনধারণের বাইরে অন্য কিছু এলে মানুষ সেটাকে মেনে নিতে পারেন না, অতিরিক্তি খিটখিটে হয়ে পড়েন,মনকে রিলাক্স করতে পারেন না। আর এসবের পরেই আসে, চরম অস্থিরতা,অমনোযোগ, দুঃখ, আতঙ্ক ,অনিদ্রা আর এসবের কারণে একসময় নিজের অজান্তেই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
- Advertisement -
এই অ্যাংজাইটির সময় কিছু শারীরিক উপসর্গও হয়৷ যেমন, গা-বমি, মাথাব্যথা, হাত-পা কাঁপা, বুক ধড়ফড়, বুকে চাপ প্রভৃতি৷ মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ আর তাঁর সঙ্গে তার পাশপাশি যারা থাকেন তাদের জীবনও হয়ে পরে দুর্বিষহ৷ কাজেই নিজের বা চেনা পরিচিত অন্য কারও মধ্যে বাড়াবাড়ি উদ্বেগ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন মনোচিকিৎসকেরা।
একটা সাধারণ মানুষ যদি ডিজঅর্ডারের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাহলে সাইকো থেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ওষুধের প্রয়োজন পড়ে৷ স্বাভাবিক জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে হয় ৷ এছাড়াও শিখতে হয় রিল্যাক্স করা ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, গোড়াতে সতর্ক হলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।সৎ সঙ্গের সত্যে মেলামেশা করলে ও অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করলে ও মনকে হালকা করতে পারলেও খুব সহজেই এই সমস্যার থেকে মুক্তি লাভ করা যেতে পারে।
এছাড়াও কিছু খাবারেরও ভূমিকা রয়েছে। মূলত শরীরে ভিটামিন ই-র অভাব হলে উদ্বেগ ও মন খারাপ বাড়ে৷ সে অভাব মেটাতে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উচিত৷ বিশেষ করে ব্রাজিল নাট ও কাঠবাদাম বা আমন্ড৷ ব্রাজিল নাটে আছে সেলেনিয়াম নামের যে খনিজ থাকে তা শরীরের উদ্বেগ কমাতে পারে৷ তবে দিনে ৩-৪টের বেশি খাওয়াও উচিত নয়।
এছাড়াও গবেষণা করে দেখা গেছে, যাঁরা মূলত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কম খান, তাঁদের মুড ডিজঅর্ডার বেশি হয়৷ কাজেই সপ্তাহে অন্তত দু-বার তৈলাক্ত মাছ, সয়াবিন, আখরোট, তিষির বীজ, শিয়া বীজ খেতে হবে। এছাড়া কড লিভার অয়েলও খাওয়া যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে অবসাদের আশঙ্কা বাড়ে৷ কাজেই দিনে ২০-৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগানো জরুরি৷ তার পাশাপাশি তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল ও প্রয়োজনে সাপলিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।
ট্রিপ্টোফানের উপস্থিতিতে শরীরে সেরেটোনিন নামে মন ভাল করার হরমোন বেশি বেরোয়৷ ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে উদ্বেগ কমাতে এই হরমোন খুব কার্যকরী৷ তাই ডিম, চিকেন, চিজ, মাছ, চিনেবাদাম, কুমড়ো বীজ, তিল, দুধ, কলা ইত্যাদি মাত্রার মধ্যে খেতে হবে৷ কুমড়োর বীজে পটাসিয়াম ও জিঙ্ক আছে যা মুড ডিজঅর্ডার ঠিক করতে সাহায্য করে৷ কলাতে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রিলাক্স হতে সাহায্য করে৷
দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলেও ফ্ল্যাভেনয়েড, ট্রিপ্টোফান, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির প্রভাবে মন ভাল থাকে৷ তবে তাতে কোকোয়ার পরিমাণ যেন ৭০ শতাংশের বেশি থাকে৷
হলুদের কারকিউমিন প্রদাহের প্রবণতা কমায় যার ফলে মন শান্ত হয়৷ এছাড়াও চ্যামোলিন চা মন হালকা করে৷ এর জীবাণুনাশক গুণ আছে৷এছাড়াও আছে প্রদাহ কম রাখার ক্ষমতা৷ কাজেই করোনা ঠেকাতেও এর ভূমিকা আছে৷ এর স্বাদ-গন্ধ ভাল না লাগলে গ্রিন টি-ও খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া,ঘরোয়া টক দই বা দোকানের ইয়োগার্টে আছে উপকারি জীবাণু, ল্যাক্টোব্যাসিলাস ও বাইফিডোব্যাকটেরিয়া৷ এগুলি খেলে পেট যেমন ভাল থাকে তেমনি ব্রেনের সুস্থতার মূলেও এর যথেষ্ট গুন রয়েছে। এছাড়াও প্রদাহ কমায় বলে মনের জন্যেও খুব ভালো।