পার্থ প্রতীম দাস , ৩ জানুয়ারি , শিলিগুড়ি :- দিনভর একশো জন লোক , চারটি কুনকি হাতি , সাতটি ট্রাপ ক্যামেরা , দুটো ড্রোন , সকাল থেকেই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে পলাতক চিতা বাঘ শচীন কে । আজ নিয়ে তিন দিন পার হয়ে গেলেও ফল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না । অভিজ্ঞ টিম , জলদাপাড়া অভয় অরণ্য থেকে আগত বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দুটি কুনকি হাতি , না তাতেও কোন কাজ হল না । হার্বিভোরাস সাফারির ঘন জঙ্গলে এপ্রান্ত থেকে সে প্রান্ত , শচীনের দেখা নেই । অপরদিকে বেঙ্গল সাফারি পার্কের পাশে মহানন্দা অভয় অরণ্য , তার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সিংহী ঝোরা , সেই নদীর চড়ে দেখা মিলেছিল চিতা বাঘের পায়ের ছাপ , প্রশ্ন উঠেছিল আদেও কি শচীন হার্বিভোরাস সাফারিতে আছে ? সে প্রশ্নের জবাবে বেঙ্গল সাফারি পার্ক ডিরেক্টর রাজেন্দ্র জাখার জানান , “বেশ কিছু পায়ের ছাপ হার্বিভোরাস সাফারিতে পাওয়া গিয়েছে , কিন্তু বাইরে চিতা বাঘের পায়ের চিহ্ন নিয়ে তাদের কিছু জানা নেই ।” কিন্তু সেই খবরের ভিত্তিতেই আজ টিম পাঠানো হয়েছিল সেই এলাকা পরিদর্শন করতে , আবার এই নদীটি বয়ে গিয়েছে হার্বিভোরাস সাফারিতে , আজ তল্লাশি চলাকালীন সাফারির ভেতরে বয়ে যাওয়া নদীর চড়ে নতুন করে মিলেছে শচীনের পায়ের ছাপ , সেখানেই স্থানান্তর করা হল খাঁচা । বেঙ্গল সাফারি পার্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এ চাকী এই প্রসঙ্গে বলেন , “সাফারি পার্কের বাইরের নদীর চড়ে চিতা বাঘের পায়ের ছাপ , পলাতক সচিনের হতেও পারে , আবার নাও হতে পারে ।”
আবার কাল থেকে পর্যটকদের উদ্দেশে খুলে দেওয়া হচ্ছে লেপার্ড সাফারি , কিন্তু পায়ে হেটে কোন সাফারি নয় , এমনকি একটু পার্কে ঘুরে বেড়াবেন তার অনুমতিও নেই , সাফারি পার্কের বাইরে পার্কিং পয়েন্ট থেকে সাফারির গাড়িতে উঠবেন সাফারি শেষে আবার নেমে যাবেন পার্কিং পয়েন্টে । তবে তল্লাশি যেমন চলছে তেমটাই চলবে , আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাতের টহলদারি । কিন্তু শচীন সম্পর্কিত বেশ কিছু অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে , প্রথমত , শচীন আদেও সাফারি পার্কের ভেতরে আছে কি না ? দ্বিতীয়ত , বন সূত্র অনুযায়ী তার ছোট বেলা থেকেই শিকার করে খাবার অভ্যেস নেই , কাজেই সে অভুক্ত রয়েছে কি না ? কারণ হার্বিভোরাস সাফারি পার্কে কোন মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়া যায় নি । তৃতীয়ত , বন দফতর ও বন ও বন্য জীব জন্তু অভিজ্ঞ লোক (যারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দের বক্তব্য অনুযায়ী , যখন কোন বন্য প্রাণী মানুষের ভিড়ে মিশে যায় , দীর্ঘদিন বন জঙ্গলের বাইরে মানুষের সৃষ্টি পরিবেশে জীবন যাপন করে তখন সে যদি বনে চলে যায় তখন বনের প্রাণীরা তাকে গ্রহণ করে না , সে ক্ষেত্রে তাকে মেরে ফেলে অন্যান্য প্রাণীরা । সেক্ষত্রে আধিকারিকদের উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে , প্রায় একপ্রকার দিনের শেষে চলছে বৈঠকের পর বৈঠক , কি হবে পলাতক শচীনের ? কনকনে শীতেও ঘাম ঝরিয়ে দিচ্ছে সে ।