সেলিম হাসান সিদ্দিকী, রাজগঞ্জ: প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখ ও ২রা বৈশাখের দিন জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের সীমান্ত এলাকায় ভারত-বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়ে একটি মিলন মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বছরের এই দুটি দিন দুই দেশের প্রায় হাজার হাজার মানুষ এসে ব্লকের সীমান্ত এলাকায় মিলিত হন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারে এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত করা হচ্ছে না। বোর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন ও বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের উত্তাপের কারনে এবারের মিলন মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ রাজগঞ্জের প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গিরানগছ, ভোলাপাড়া, খালপাড়া,গোসাইআখারা গ্রামে কাটাতারের পাশে প্রতিবছর এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হত। বছর পেড়িয়ে ওপার বাংলার স্বজনদের সৌজন্যে সাক্ষাৎ -এ ফুটে উঠতো সীমান্ত জুড়ে হাসি-কান্নার রোল৷ পাশাপাশি নববর্ষের উপহার সহ নিত্যদিনের সামগ্রী আদানপ্রদানের চিত্রও দেখা যেতো তবে এবারে তা আর হবে না, পাওয়া যাবে না নববর্ষে ওপার বাংলার ইলিশ। এই সীমান্ত মিলন মেলার উদ্যেগক্তাদের মধ্যে গিরান গছের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, মিলন মেলার ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি জেলা শাসকের অনুমতির প্রয়োজন, কিন্তু ভোটের কারণে এবার অনুমতি পাওয়া যায়নি, তাই এবার মেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে মিলন মেলাকে কেন্দ্র করে সীমান্তের গ্রামগুলিতে প্রতিবছর এই দুই দিন উৎসবের আমেজ তৈরি হতো, আত্মীয়-স্বজনে ভরে উঠত গ্রামের প্রতিটি বাড়ি, এবার সবাইকে আগাম জানিয়ে দেওয়ায় সকলেরই মন খারাপ।
কাঁটাতারের পাশে দুই বাংলার এই মিলনমেলা হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা ও ভাব বিনিময় করেন। তবে এবারো সেই অন্যরকম আনন্দ চোখে পড়বে না।
উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগে পর্যন্ত ওপার বাংলার পঞ্চগড় জেলা ভারতের জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, দেশ ভাগের কারণে জলপাইগুড়ি এপার বাংলায় ও পঞ্চগড় ওপার বাংলায় বিভক্ত হয়ে যায়। বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে আর সাক্ষাৎ করার কিংবা কথা বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন দুই দেশের নাগরিক । উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে এই বিশেষ দিনে বেশ কিছু সময় ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে নববর্ষের দিন তারা কাঁটাতারের দুই ধারে এসে দেখা করার সুযোগ পান। তবে নির্বাচন ও করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের দাপটে নববর্ষে দুই বাংলার আনন্দে চির টানছে এবার।