দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- কিছুদিন আগে সাংসদে কৃষি বিল পাশ করা হলেও তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয় যার ফলে ক্রমাগত বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় সরকারকে। আর এই বিরোধিতাকে রুখতে আজ সঙ্ঘ পরিবারের অগ্রপথিক দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সকল কৃষকদের উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য রাখেন। যেখানে তার সর্বপ্রথম বক্তব্য ছিল, কিছু মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত কার্যসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিপথে চালিত করছে।
এদিন বিজেপির কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিনের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘‘মিথ্যে বলে এত দিন কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন যাঁরা, তাঁরাই এখন কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে চালাচ্ছেন। সরকারি নীতি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’’ তিনি এও বলেন, “করের বোঝা বাড়লেও, এত দিন কৃষকদের আয় বাড়েনি। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারই তাঁদের কথা ভেবেছে। আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি সহায়ক মূল্য তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করায় সচেষ্ট হয়েছে সরকার।’’
এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাদল অধিবেশনে পাশ হওয়া শ্রম বিল সম্পর্কে বিরোধী পক্ষ যে অভিযোগ করেছিলেন তার উত্তরে, তিনি বলেন, ‘‘কৃষকদের মতোই বহু বছর ধরে শ্রমিকদের আইনের জাঁতাকলে আটকে রাখা হয়েছিল। ক্ষেত, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম, চিত্রনির্মাণ শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা আইন ছিল। আর তাই বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আদালতের চক্কর কাটতে হতো তাঁদের। চার লেবার কোডের মাধ্যমে তাঁদের সেই গোলোকধাঁধা থেকে বার করে আনায় সচেষ্ট হয়েছি আমরা।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য,” শ্রমিক আইনকে আগের চেয়ে সরল ও সোজা করা হয়েছে। এতে দেশের ৫০ কোটি শ্রমিকরা যাতে সময়ে বেতন পান, আইনি ভাবে তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এত দিন দেশের ৩০ শতাংশ শ্রমিকরাই ন্যূনতম বেতন পেতেন। আগামী দিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত সমস্ত শ্রমিকও তা পাবেন। এ বার থেকে ঠিকা শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতন পাবেন। আগের মতো যত ক্ষণ ইচ্ছা তাঁদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে না। বরং তাঁদের জন্যও বাঁধাধরা কাজের সময় থাকবে।’’
- Advertisement -
এগুলি ছাড়াও এদিনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-
১.২১ শতকের এই ভারত প্রবীণ ও নবীন উভয়ের মেলমন্ধনে তৈরি। তাই পরবর্তীকালে যাতে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের আদর্শ, ঐতিহ্য, অনুপ্রেরণা পৌঁছায় সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজনীতিক দল হলেও, দেশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে আমাদের সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া উচিত। প্রত্যেকে যাতে নিজেদের সামাজিক দায়িত্বও সতর্কতার সঙ্গে পালন করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। করোনা কালে ২ গজ দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধোওয়া, এই সমস্ত বিষয়ে আরও মানুষকে সচেতন করতে হবে।
২. করোনা আবহেও বিজেপি আধিকারিকেরা সঠিক সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাড়িয়েছেন। যারা সাহায্য প্রার্থী তাদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর এই সকল কাজের জন্য তিনি তার দলের কার্যকর্তা এবং সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডাজিকে অভিনন্দনও জানান।
৩. গ্রামে গঞ্জে যেখানে মানুষদের আলোর সমস্যা ছিল, ঠিকমত ইন্টারনেট পরিসেবা ছিল না, সেই সমস্ত স্থানে বিজলি বাতি থেকে শুরু করে নেট কানেকশন এসেছে। পাশাপাশি অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দেশবাসীকে দিয়েছিলেন করোনা আবহ থাকা সত্ত্বেও তা পূরণ করা হয়েছে।
৪.কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, বিজেপি সরকার সমাজের সকল মানুষকে সমান ভাবে সুবিধা দেওয়ার পক্ষপাতী। বিজেপি সরকারের কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। এক বছর আগে দেশবাসী বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় এনেছে। তাঁদের জন্য অনেক পরিবর্তন এনেছি আমরা।
৫. আগের শ্রমিক আইনে মহিলা শ্রমিকদের জন্য কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না কিন্তু এবারে নতুন আইনে মহিলা শ্রমিকেরাও সঠিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা পাবেন বলে জানান তিনি।
৬.এত দিন দেশের ৩০ শতাংশ শ্রমিকরাই ন্যূনতম বেতন পেতেন। কিন্তু আগামী দিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত সমস্ত শ্রমিক ও ঠিকা শ্রমিক প্রত্যেকেই নিয়মিত বেতন পাবেন। এছাড়াও নতুন শ্রমিক আইন আগের চেয়ে অনেক সোজা করা হয়েছে। দেশের ৫০ কোটি শ্রমিকরা যাতে সঠিক সময়ে বেতন পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখবে বিজেপি সরকার।
৭. বহুবছর ধরে আইনের যাঁতাকলে আটকে ছিল শ্রমিক সম্প্রদায়। ক্ষেত, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম, চিত্রনির্মাণের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা আইন ছিল। তাই বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আদালতের চক্কর কাটতে হতো শ্রমিকদের। কিন্তু এবারে চার লেবার কোডের মাধ্যমে তাঁদের সেই গোলোকধাঁধা থেকে বার করে আনায় সচেষ্ট হয়েছে মোদি সরকার।
৮. তিনি এও বলেন এতদিন যাঁরা মিথ্যে বলে কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন, এখন কৃষকদের কাঁধে একপ্রকার বন্দুক ঠেকিয়ে তাদেরকে সরকারি নীতি নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন তারা।
৯.বেশি সংখ্যক কৃষকদের হাতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আগে যাঁদের ২ হেক্টর পর্যন্ত জমি ছিল, তারাই কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতেন। কিন্তু আজ সকলেই এই সুবিধা পাচ্ছেন। বর্তমানে পশুপালন এবং মাছ চাষে নিযুক্ত মানুষেরাও এই সুবিধা পাবেন।
১০. করের বোঝা বাড়লেও, এত দিন কৃষকদের আয় বাড়েনি।কিন্তু এবারে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারই এই কৃষকদের কথা ভেবেছে। আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি সহায়ক মূল্য তুলে দিয়েছেন দেওয়া হয়েছে কৃষকদের হাতে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করায় সচেষ্ট হয়েছে সরকার।
১১. রাষ্ট্রের কল্যাণ ছেড়ে কিছু মানুষ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই বহু বছর ধরেও সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি। কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের অনেক প্রয়োজনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
১২. স্বাধীনতার পরে বহু দশক ধরে কৃষক ও শ্রমিকদের নামে অনেক স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেক বড় বড় ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সে সব যে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা পরে বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষ।
১৩. যুবসমাজ, শ্রমিকশ্রেণী এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে বর্তমানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির তরফে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। করদাতা মানুষ যাতে সমস্যার মুখোমুখি না হন তার জন্য ‘ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম’ কর ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
১৪. দীনদয়ালজি অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। ২১ শতকের ভারতকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করায় তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন ভারতের রূপরেখা তৈরিতে যখন বিদেশি নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল, সেইসময় দেশীয় সংস্কৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন দীনদয়ালজি। তিনি ভারতের রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং রাজনীতি, সব কিছু নিয়ে লিখেছিলেন। রাষ্ট্র এবং সমাজ হিসেবে ভারতকে উন্নততর করে তোলায় দীনদয়ালজির ভূমিকা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। এদিন নরেন্দ্র মোদী বলেন, পণ্ডিত দীনদয়ালজির সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়নি তার। কিন্তু এই মহান ব্যক্তি আদর্শ ও চিন্তাভাবনা, প্রতি মুহূর্তে তাকে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
১৫. করোনা আবহে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াতে গিয়ে,তাদেরকে সাহায্য করতে গিয়ে অনেক বিজেপি নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তাও তারা প্রত্যেকে নিজেদের দায়িত্ব থেকে পিছুপা হননি। তাই তিনি প্রত্যেককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আজকের এই মহামানবের জন্মশতবার্ষিকীতে তিনি তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আজকের এই বৈঠকে তিনি দেশ জুড়ে বিজেপির কর্মঠ কার্যকর্তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।