দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- বিতর্কিত বিচারধীন জমিতে বেসরকারি হাসপাতাল ও কমার্সিয়াল প্রজেক্টের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে যোগদানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিতর্কের মুখে মন্ত্রী।
শিলিগুড়ির সেবক রোডের শালুগড়ার কাছে এই জমিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বহুদিনের। যার এখনো কোন সুরাহা হয়নি। মামলা আজও বর্তমান আদালতে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেআইনি ভাবে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের ভক্তিনগর থানার পুলিশের উপস্থিতিতে গেট ভেঙে জমি দখল করে সুরজ বিল্ডকন প্রাঃ লিঃ কোম্পানি তথা সুরেশ গর্গ। খোদ পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য দিবালোকে বেআইনি কাজে সামিল খোদ পুলিশ। তারপর থেকেই জমিতে পুলিশ পিকেটিং বসিয়ে কাজ চলছে দিন রাত।
উল্লেখ্য এই জমিকে কেন্দ্র করেই ভক্তিনগর থানার আইসি সুজয় টুঙ্গা সহ থানার সেকেন্ড অফিসার সন্দীপ সুব্বাকে ক্লোজ করা হয়েছিল। সেই জমিতেই এবার বেসরকারি হাসপাতাল ও কমার্সিয়াল প্রজোক্টের শিলান্যাস করলেন মন্ত্রী গৌতম দেব। যা থেকে অনেক চিত্রই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন জমির দাবিদার বা মামলাকারী সুশিলা রায়।
- Advertisement -
৭০ উর্ধ মামলাকারী সুশিলা রায়ের বক্তব্য , এই জমি তাদের বাবা-ঠাকুরদার নামে। ভুয়ো কাগজ বানিয়ে সুরজ বিল্ডকন প্রাঃ লিঃ কোম্পানি এখানে নির্মান কাজ চালাচ্ছে। গোটা ঘটনা একাধিকবার রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে জানিয়েছি। তিনি নিজের অফিসে আমাকে তলব করিয়ে বিভিন্ন কাগজও দেখেছেন। একাধিকবার এই সমস্যা নিয়ে তার দ্বারস্থ হয়েছি। মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছ থেকে শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। ২০২০ সালে ২৪ ডিসেম্বর যখন পুলিশ বেআইনি ভাবে মাফিয়াদের জমিতে ঢুকিয়ে দিয়ে যায় সেই সময় পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়েই বিস্তারিত ঘটিনা জানিয়েছি কিন্তু তার বদলে অকথ্য ভাষা শুনতে হয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে। যখন সমস্ত ঘটনাই পুলিশ প্রশাসন সহ মন্ত্রী জানেন তখন কি ভাবে এই বিচারাধীন জমিতে শিলান্যাস করেন মন্ত্রী ?
অপরদিকে সুশিলা রায়ের আইনজীবী শশী কানোডিয়া জানান , আদালতে এই জমি বিচারাধীন , আদালতে এখনো কারও পক্ষে কোন রায় প্রদান করেনি। এমন পরিস্থিতিতে কি ভাবে একটি জমিতে নির্মান কাজ চলতে পারে। পাশাপাশি তিনি আরও জানান , আইনতভাবে একই বিল্ডিংয়ে কখনোই হাসপাতাল এবং কমার্সিয়াল প্রজেক্ট হতে পারে না।
যদিওবা এ বিষয়ে মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য “জমিতে কোন বিতর্ক থাকলে আমি যেতাম না , বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হয়ে গিয়েছে তা শিলান্যাস হচ্ছে। তিনি আরও জানান , এই এলাকায় একটি ভালো নার্সিংহোম হওয়া প্রয়োজন।” অপরদিকে সুরজ বিল্ডকন প্রাঃ লিঃ কোম্পানির দাবি , জমিতে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হয়ে গিয়েছে। যে বা যারা ঝামেলা করছিল তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।”
বিচারাধীন একটি জমিতে কি করে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হয়ে যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর আগেও অবৈধভাবে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে। এই ঘটনা যেন আবারও সেই প্রশ্নের মুখেই ফেলে দিল কর্পোরেশনকে। অপরদিকে সুশীলা রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী পুর প্রশাসক অশোক ভট্টাচার্যকে তিনি গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার। অপরদিকে শিলান্যাসের বিষয় নিয়ে অশোক ভট্টাচার্য জানান , “আমি সম্পুর্ন বিষয়টি জানিনা , তবে মন্ত্রী যখন গিয়েছে আশা রাখব সব কিছু দেখে , বুঝেই গিয়েছেন”।
উল্লেখ্য , রবিবার জমিতে যখন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিলান্যাস অনুষ্ঠান চলছে তখন অন্যদিকে জমির দাবিদার তথা সুশীলা রায় ও ধনিলালা রায়দের বাড়িতে পুলিশি প্রহরায় আটকে রাখা রয়েছে। যদি জমি সুরজ বিল্ডকন প্রাঃ লিঃ কোম্পানির হয়ে থাকে তাহলে কেন এত পুলিশি প্রহরা ? কেনই বা তাদের আটকে রাখা হল বাড়িতে ?
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মন্ত্রী গৌতম দেব। তার বিধানসভা এলাকা জমি মাফিয়াদের অভিযোগে ভরপুর। জমি দখলকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী কোন্দলও যথেষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। যদিওবা এ বিষয় নিয়ে মন্ত্রী বা বিধায়কের কাছ থেকে কখনোই কোন সদুত্তর মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিচারধীন জমিতে মন্ত্রীর শিলান্যাস অবশ্যই মাফিয়াদের প্রশয় দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে দেওয়া হল। ভোটের মুখে শিলান্যাসকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়ালেন মন্ত্রী তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধায়ক গৌতম দেব।