দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোটা দেশ আতঙ্কিত। সমগ্র দেশ জুড়ে রোজ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। আর এই রকম পরিস্থিতিতেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত টিকা। এমনই একটি চিত্র ধরা পড়ল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বন্ধ করা হলো টিকাকরণ। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
গোটা দেশের অন্যান্য জায়গাগুলির পাশাপাশি এই রাজ্যেও কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি মৃতের সংখ্যাও ক্রমশ বেড়েউ চলেছে। এইরকম পরিস্থিতিতে সেখানকার প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিনের প্রয়োজন, তবে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও নেই ভ্যাকসিন।জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষদের তরফে হাসপাতাল চত্ত্বরে ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দিয়ে দাবি করা হয়েছে “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই”। টিকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে যারা হাসপাতালে যান তারা এই ফ্লেক্স দেখার পরে স্বাভাবিকভাবেই নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। মহামারী থেকে রেহাই পাওয়ার সামান্য আশা টুকু না থাকায় এলাকাবাসীরা সকলেই খুব চিন্তিত।
উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের কারণে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৫ ই এপ্রিল জেলায় ২০২ জন মানুষের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। জানা গিয়েছে, ওই দিন পর্যন্ত জেলায় মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩২৪৪ জন। আর জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১৮০ জন । এরপর মাত্র ১৩ দিনের মাথায় অর্থাৎ বুধবার রাত পর্যন্ত জেলায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭৪৫ জন, অর্থাৎ ১৩ দিনে জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫০১ জন, আর এই ১৩ দিনে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৪ জনের ।
বলাবাহুল্য স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুয়ায়ী কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশী বর্ধমান শহরে। পাশাপাশি জামালপুর ব্লকেও প্রতিদিন কোভিড আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে জামালপুর হাটতলা এলাকার বাসিন্দা ডেকেরেটার ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় । আর এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই জামালপুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়। এমনকি আতঙ্কের কারণে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন একটি পাড়ার এক বৃদ্ধা বুধবার মারা গেলে, তাঁর দেহ সৎকারে প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এলাকাবাসীরা জানেনও না ওই বৃদ্ধা আদৌ কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ,না ছিলেন না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক প্রতি মুহুর্তে এতটা বেড়ে চলেছে যে টিকা পাওয়ার জন্য বিগত কয়েকদিন ধরে বহু বাসিন্দা রাত থেকেই জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিছুদিন টিকা দেওয়াও চলছিল স্বাভাবিক নিয়ম মেনে । কিন্তু কোভিড’ ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে টিকাকরণ বন্ধ করে দেওয়া হলো।
- Advertisement -
ঘটনায় জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক ঋত্বিক ঘোষ বলেন ,কোভিড ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এদিন পর্যন্ত আর ভ্যাকসিন হাসপাতালে পৌঁছায়নি। আর সেই কারনেই কোভিড ১৯ ’ভ্যাকসিনের সরবরাহ যে নেই তা জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্যেই ’ফ্লেক্সে লিখে’ হাসপাপাল চত্ত্বরে ঝোলানো হয়েছে। ঋত্বিকবাবু আরও জানান ,গত ২৫ জানুয়ারি থেকে জামালপুর হাসপাতালে কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হয় । প্রথম দিকে ’টিকা’ নেওয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ খুব কম ছিল । মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ‘টিকা’ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন জামালপুরের বাসিন্দারা। সংক্রমণ হার ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত তিন সপ্তাহ ধরে কোভিডের টিকা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল চত্ত্বরে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই টিকা শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়, শুক্রবারের মধ্যে যদি টিকা চলে আসে তাহলে আগামী শনিবার থেকে আবার টিকা দেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় টেলিফোনে বলেন,“জেলায় ভ্যাকসিন অপ্রতুল থাকাতেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভ্যাকসিন ঘাটতির জন্য এদিন জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া জেলার আর কোনও হাসপাতালে এদিন টিকাকরণ বন্ধ ছিল কিনা সেই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক কিছু জানাতে পারেননি। এমনকি ভ্যাকসিন সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে সেই বিষয়েও সিএমওএইচ এদিন কিছু বলতে পারেন নি“ ।