দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- গোয়ালবাথান এলাকায় ঘটে যাওয়া এক আশ্চর্য ঘটনায় পুলিশ সহ সমগ্র এলাকাবাসীর একপ্রকার হতবাক হওয়ার মতো অবস্থা। নিজের স্বামীকে খুন করে তাঁর মৃতদেহকে মাটিতে পুঁতে সেই ঘরেই প্রেমিকের সঙ্গে সহবাস করলো মৃতের স্ত্রী। মৃতের নাম রামকৃষ্ণ সরকার এবং অভিযুক্ত দুজনের নাম স্বপ্না সরকার ও তার প্রেমিক সুজিত দাস।
মঙ্গলবার দুপুরে গোয়ালবাথান এলাকার একটি পুকুরের ধারে রক্তের দাগ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপরেই খবর দেওয়া হয় গাইঘাটা থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় পুলিশ। এরপর তল্লাশি চালিয়ে পুকুরের ধারের বাঁশবাগান থেকে পাওয়া যায় জুতো, মাস্ক এবং একটি টর্চলাইট। এরপর বুধবার সকালে ওই এলাকারই বাসিন্দা সুজিত দাসের বাড়ির সামনে রক্তের দাগ দেখতে পান স্থানীয় মানুষ। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে তালা ভেঙে সেই ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢোকা মাত্রই দেখা যায় খাটের নিচে অনেকটা অংশে মাটি খোড়া। এরপরে মাটি খুঁড়ে দুপুর নাগাদ এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। তদন্ত করে জানা যায় মৃত ব্যক্তির নাম রামকৃষ্ণ সরকার। কোচবিহারের বানেশ্বরপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। বিয়ের পর বনগাঁর বাবুপাড়ায় স্ত্রী ও পাঁচবছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর স্ত্রীকেই প্রাথমিক সন্দেহ করা হয়। এরপরে পুলিশ স্বপ্না ও তার প্রেমিক সুজিতকে গ্রেফতার করে জেরা করতেই জানা যায় আসল রহস্য।
এই ব্যাপারে পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে নিজেদের অপরাধের কথা নিজেদের মুখে স্বীকার করে নিয়েছে দুই অভিযুক্ত। মৃতের স্ত্রী স্বপ্না জানায়, তার মোবাইলে আসা একটি মিস কলের সূত্রেই গত আটমাস আগে সুজিতের সঙ্গে তার আলাপ। সেই আলাপ পরবর্তীতে প্রেমে পরিণত হয় । ছক করে স্বপ্না তার বন্ধু হিসেবে প্রেমিকের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামীর। কিন্তু সত্যি কখনোই চাপা থাকে না, কিছুদিনের মধ্যেই দুজনের সম্পর্কের কথা রামকৃষ্ণবাবু জেনে যান। বেশ কয়েকবার এ নিয়ে সুজিতের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটিও হয়। স্ত্রী স্বপ্নাকে রামকৃষ্ণবাবু একাধিকবার মারধর করেন বলেও অভিযোগ করেছে পুলিশ। প্রতিশোধ নিতে তাই রামকৃষ্ণবাবুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে সুজিত ও স্বপ্না।
- Advertisement -
পুলিশ আধিকারিকরা জানান, স্বপ্না ও সুজিত স্বীকার করেছে, তারা পরিকল্পনামাফিক সোমবার দশমীর দিন সুজিত তাঁর বাড়িতে দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার নিমন্ত্রণ করে স্বপ্না ও তার রামকৃষ্ণবাবুকে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে রাতে বিসর্জন দেখতেও বের হন তারা। শুধু তাই নয় রামকৃষ্ণবাবুকে মদও খাওয়ায় সুজিত। এরপরে বাড়ি ফেরার পথে রামকৃষ্ণবাবুকে অনুসরণ করে সুজিত। বাড়ি ঢোকার মুখে পিছন থেকে একটি চেলাকাঠের টুকরো দিয়ে রামকৃষ্ণের মাথায় সজোরে আঘাত করে সুজিত। রক্তাক্ত অবস্থায় ওখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। জ্ঞান হারালে স্বপ্নার পরামর্শে রামকৃষ্ণবাবুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই চেলাকাঠ দিয়েই বেশ কয়েকবার তাঁর মাথায় আঘাত করে সুজিত। এরপর তাঁর দেহ বাঁশবাগানে লুকিয়ে ফেলে। এরপরে মাঝরাতে দেহ প্লাসটিকে মুড়ে নিজের ঘরে খাটের তলায় মাটি খুঁড়ে সেখানে লুকিয়ে ফেলে তারা। সে সময় সুজিতের মা সমস্ত ঘটনা দেখে ফেলেন বলেও ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে পুলিশ। এ নিয়ে সুজিতের সঙ্গে তার মায়ের বচসাও হয়। তবে মায়ের কথা না শুনেই রামকৃষ্ণবাবুর দেহ মাটিতে পুঁতে রেখে তার ওপরে খাটের ওপর রাত কাটায় সুজিত এবং স্বপ্না।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়ে স্বপ্নার দাবি, তিনি এই খুন করতে বারণ করেছিলেন। বরং তাঁকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সুজিতকে। কিন্তু সুজিত শোনেনি। মৃতদেহ নিয়ে কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে ঘরের মেঝে খুঁড়ে দেহ লুকিয়ে ফেলেছিল বলে জেরায় জানিয়েছে সুজিত। গাইঘাটা থানার আধিকারিকরা বলেন, ‘‘ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল তারা। কিন্তু গ্রামের মানুষের নজরে পড়ে যাওয়ায় সেই ছক বানচাল হয়।”