দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- পরিবেশ দূষণ কমাতে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই পরিকল্পনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত শুক্রবার থেকে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ দ্রব্য তৈরি, আমদানি, সরবরাহ এবং বিক্রিতে দেশ জুড়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ৭৫ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আগেই দেওয়া হয়েছিল। এবার পুরোপুরি ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহারে আনা হল নিষেধাজ্ঞা।
পরিবেশ মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, ‘এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন’, ‘পলিস্টিরিন’-সহ যে কোনও ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের’ উৎপাদন, বিক্রি, আমদানি, বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্লাস্টিক তৈরি হয় ‘এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন’ দিয়ে। শ্যাম্পু, সাবানের বোতল থেকে শুরু করে মাস্ক, ময়লা ফেলার প্যাকেট, চিপ্সের প্যাকেট— সবই তৈরি হয় এই ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে। মিষ্টি ও সিগারেটের বাক্সেও থাকে এই ধরনের প্লাস্টিক। এবার এই প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা পালন করতে কড়াকড়ি নজর সরকারের। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার করলে পরিবেশ সুরক্ষা আইন (ইপিএ)-এর ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেল কিংবা জরিমানা, অথবা দুই-ই হতে পারে।
এই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘কলকারখানা এমনকি, সাধারণ মানুষকেও প্লাস্টিক নিয়ে অনেক বার সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষত ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ বন্ধ করার জন্য অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউই সরকারের নির্দেশকে গুরুত্ব দেয়নি। অবশেষে ১ জুলাই থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে সরকার।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ বর্জনের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হচ্ছে দেখলে কেউ এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি, আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এফএমসিজি সেক্টরে প্যাকেজিংয়ের জন্য প্লাস্টিক একেবারেই যে নিষিদ্ধ, এমনটা নয়। তবে তার জন্য কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বছরে ভারত প্রায় ২.৪ লক্ষ টন ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ উৎপন্ন হয়, তা হলে মাথাপিছু এই প্লাস্টিক ব্যবহার ধরলে হয় ০.১৮ কেজি। গত বছরের ১২ আগস্ট একটি নির্দেশিকায় কেন্দ্র ‘পলিস্টিরিন’ এবং ‘এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন’-সহ ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, বিতরণ, বিক্রয় এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
- Advertisement -
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্যে প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা করতে কড়াকড়ির পথ নিয়েছে সরকার। ১ জুলাই থেকে হরিয়ানা সরকার ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞায় সংকল্প নিয়েছে। একটি দল ও তৈরি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে যারা ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ তৈরি যাতে ঠেকানো যায় সেদিকে নজর রাখবে।ইতিমধ্যেই রাজধানী দিল্লি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে। হকার থেকে শুরু করে ছোট-বড় দোকান সব জায়গায় ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কলকাতাতেও। বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক দ্রব্যের তালিকায় আছে ৭৫ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা প্লাস্টিক ব্যাগ, এয়ারবাডস, প্লাস্টিকের চামচ, থালা, গ্লাস এবং কাপ, স্ট্র-সহ যে সব প্লাস্টিক পদার্থ দিয়ে প্যাকেট করা হয়। মোট ১৯টি ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার নিষিদ্ধ। যার মধ্যে রয়েছে, বেলুনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক দ্রব্য, আইসক্রিমের চামচ, থার্মোকল, প্লাস্টিকের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লাস্টিকের কাপ। নিষিদ্ধের তালিকায় আছে মিষ্টির বাক্স, আমন্ত্রণপত্র, সিগারেট প্যাকেটের উপরে যে প্লাস্টিকের আস্তরণ ব্যবহৃত হয়।