দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- গত ৫- ৬ বছর ধরে ভরা বর্ষায় ডুয়ার্সের মানুষের কাছে নতুন এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে কালিম্পং পাহাড় থেকে নেমে আসা রমতি নদী।কালিম্পং জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেই রমতির প্রবল জলধারা একদিকে যেমন শিলিগুড়ি – আলিপুরদুয়ার সেকশনের রেলপথের ক্ষতি করছে, তেমনি এর প্রবল প্রবাহের জেরে সাময়িকভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ারও নজির মিলেছে, এমনকি বিপর্যস্ত হয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের যান চলাচল। ফলে রেলযাত্রীদের পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে ডুয়ার্স – শিলিগুড়ি সড়কপথের অগনিত যানবাহন চালক ও যাত্রীদেরও। শেষমেষ রয়্যালটি ইস্যূকে ঘিরে রেল এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের মতবিরোধের জেরে আপাতত রমতি নদীকে নিয়ন্ত্রণ করে ঘিস নদীতে মিলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রেলের।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকবছর ধরে বারংবার একই পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় রেলের তরফে অবশেষে ঘিস রেল সেতু থেকে কালিম্পং পাহাড়ের একেবারে পাদদেশে যেখান থেকে রমতি নদী ঘিস নদীতে মিশে
যায়, সেখানে প্রায় ১৮০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করলো রেল। এই ব্যাপারে রেলের এক বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, বাঁধ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্যের সেচ দপ্তরের সাথে এলাকায় জয়েন্ট সার্ভে করা হয়েছিলো। সেচ দপ্তর বিশাল এই বাঁধ তৈরির দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করার পর রেল নিজে থেকেই রেলওয়ে ট্র্যাক ও জাতীয় সড়ক রক্ষার জন্য কাজটি করবে বলে ঠিক করে।সেইমতো টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ১৮০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরির কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। কিন্তু মাত্র ৪৫০ মিটার বাঁধ নির্মান কাজ হতেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সঙ্গে রেলের নির্মান বিভাগের রয়্যালটি ইস্যূতে মতবিরোধ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তিনি বলেন,দু পক্ষের মতবিরোধ মেটানোর চেষ্টা চলছে।এরই মাঝে বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় আপাতত বাঁধ নির্মান কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে এক্ষেত্রে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সুত্রে খবর ,বাঁধ তৈরির জন্য যে পরিমান, বালি,মাটি, পাথর ইত্যাদি ঘিস নদী থেকে তুলে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে তার বিনিময়ে সরকারি নিয়ম মেনে রয়্যালটি কাটতে হবে। কারন এগুলো রাজ্যের সম্পদ, রয়্যালটি না কেটে এই কাজ করা যাবে না।
বাঁধ নির্মাণের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থার ম্যানেজার সমির সরকার জানিয়েছেন, দুই দপ্তরের মধ্যে মতানৈক্যর জন্য ১৮০০ মিটার বাঁধটি এখন তৈরি হচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত মাত্র সাড়ে চারশো মিটার বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, তাই রমতি নদীর জল সেই পুরোনো খাদেই প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফল স্বরুপ পাহাড়ে ভারি বৃষ্টি হলেই সেই জল জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে বইছে এবং ক্ষতি হচ্ছে জাতীয় সড়কের এবং রেল লাইনের। পাশাপাশি ঠিকাদার সংস্থার ইনচার্জ শিবা রায় বলেন, বাঁধটি ১৮০০ মিটার না হওয়ার কারনে রোমতি নদীর জলকে ঘীস নদীতে কনভার্ট করা যাচ্ছে না, ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
- Advertisement -
উল্লেখ্য, এই ব্যাপারে এলাকার পরিবেশ প্রেমী নফসর আলী বলেন, দুই দপ্তরের মধ্যে গোলমালের কারনে, ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারন মানুষকে। পাশাপাশি বহু গাছেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই দুই দপ্তর সমস্যা মিটিয়ে ১৮০০ মিটার বাঁধটি তৈরি করুক, যাতে জাতীয় সড়ক এবং রেল লাইনকে বাঁচানো যায় এবং সাধারন মানষের দুর্ভোগ কমে।