দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- মহামারীর কারণে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ আছে যাদের রোজগারের পথ একপ্রকার বন্ধ হয়ে পড়েছে। এইরকমই একজন খেটে খাওয়া মানুষ একুশ বছর বয়সি সুদামা। লকডাউন চলাকালীন এই মুহুর্তে সুদামার সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বছর একুশের সুদামার বাড়ি বিহারের হুলহুলি গ্রামে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে সে রোজগারের জন্য শিলিগুড়ির মহকুমার ফাঁসিদেওয়া এলাকায় থাকে। তার রোজগারের একমাত্র রাস্তা হলো বিভিন্ন দোকানে ঘুরে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা উপার্জন করা। এই রোজগারের রাস্তায় সুদামার সঙ্গী হলো ঢোল । ঢোল নিয়ে বাজারের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে তার গান শুনিয়ে কিছু ভিক্ষে উপার্জন করেন । প্রায় প্রত্যেকদিন ফাঁসি দেওয়ার বিধান নগর বাজারে ঢোল হাতে নিয়ে সুদামা কে গান করতে দেখা যায় । কিন্তু লকডাউন যেন অভিশাপ হয়ে নেমেছে তাদের পরিবারে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে উপার্জনের রাস্তা। অনেকেই ভাবতে পারেন মাত্র ২১ বছরের ছেলে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা চায়? দুঃখের বিষয় হলো সুদামা চোখে দেখতে পায় না। জন্মের পর থেকেই সে অন্ধ। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তার বাবা-মা তার চিকিৎসা করাতে পারেনি। পরিবারে তার অসুস্থ বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন তার ছোটো ভাই। পরিবারে একমাত্র অবলম্বন, উপার্জনকারী হলো সুদামা। কিন্তু এখন এই উপার্জনের পথ বন্ধ হতে চলেছে, কারণ করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যজুড়ে কড়া লকডাউন ও নানা প্রকার বিধিনিষেধ জারি করেছেন। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাজারহাট খোলা এবং বন্ধ করা হয়। আর তাতেই ঘটেছ বিপত্তি। লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটেও তেমন মানুষ নেই, তাই কেউ যে সুদামার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে সেই পথও বন্ধ। সব আশা হারিয়ে সামান্য কাজের আশায় এই মুহুর্তে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সুদামা। তার একটাই আর্জি, দু-টো টাকা উপার্জন করিয়ে পরিবারের মুখে সামান্য অন্ন জোগানো।
- Advertisement -
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ইতিমধ্যেই করোনা মহামারী নিয়ে একটি গানও লিখে ফেলেছে সুদামা। আর এখন সেই গানটিকে আশ্রয় করেই বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ঢোল বাজিয়ে গান করছে সে, তার গান শুনে কিছু দোকানদার তার হাতে টাকা আবার কেউ কেও কিছু খাবার জিনিস তুলে দিচ্ছেন। আর তা নিয়েই হাসি মুখে বাড়ির দিকে ফিরছে সুদামা। তবে গরিব হলেও সে তার কষ্টের কথা মুখ ফুটে কারো কাছে বলতে চায়নি। তার পরিস্থিতি ও কষ্টের কথা জানতে চাইলে সে বলেছে, “লকডাউনের কারণে তার সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছে, কেউ কেউ তাকে ১০ কিংবা ২০ টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়”।
বিধাননগরের মিষ্টির দোকানদার সুদামাকে প্রতিনিয়ত খাওয়ার জন্য মিষ্টি, সিঙ্গারা দিয়ে থাকেন তিনি সুদামার কষ্টের কথা আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ” সুদামা রোজ বাজারে এসে ঢোল বাজিয়ে গান গায়, বাজারের দোকানদারেরা তার গানে খুশি হয়ে তাকে যথাসম্ভব টাকা দিয়ে সাহায্য করে, আর সেই টাকা দিয়েই তার সংসার চলে। তবে লকডাউন চলায় তার রোজগারের রাস্তা বন্ধ, কারণ সব দোকানপাটও যে বন্ধ”। তাই দোকানদারের বক্তব্য, এই মুহুর্তে যেন প্রশাসনের তরফ থেকে সুদামা এবং তার পরিবারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করা হোক। সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য কিছু সাহায্য পেলে অন্তত এই মহামারী পরিস্থিতিতে সুদামার পরিবার সামান্য খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
করোনা অতিমারিতে যে সকলের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তাই নয়, এ দেশে সুদামা ও তার পরিবারের মতো বহু লক্ষ লক্ষ পরিবারের উপার্জনও কেড়ে নিয়েছে। তাই আমরা আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সুদামার মতো দৃষ্টিহীন খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।