দ্য এক্সপোস ব্যুরোঃ- নানান বৈচিত্রের সমাহার আমাদের এই দেশ। ইন্টারনেট ও বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়েও এমন অনেক আশ্চর্যজনক জায়গা বা স্থান রয়েছে যেগুলির সত্যতা এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকদের পক্ষেও জানা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার বছর ধরে পড়ে থাকা অন্ধকার গুহা বা কোনো পাহাড় প্রায় কয়েকশো বছর আগের বা তারও আগের চিহ্ন এখনও পর্যন্ত বয়ে নিয়ে চলেছে। এমনই একটি আশ্চর্য ও রহস্যময় গুহার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে কাশ্মীরের কুপওয়ারায়। এই স্থানে প্রায় কয়েকশো বছর পুরোনো একটি গুহা রয়েছে যার নাম কালারুশ গুহা। শুনলে অবাক হওয়ার বিষয়, এই অঞ্চলের মানুষদের ধারণা, এই গুহাপথে নাকি পৌঁছে যাওয়া যায় সূদূর পাকিস্তান ও রাশিয়াতে। আশ্চর্যের ব্যাপার, কাশ্মীরের লোলাব উপত্যকার কুপওয়ারায় লাশতিয়াল এবং মাধমাদু গ্রাম দু’টির মাঝে একটি বিশাল পাথর প্রায় বহু বছর আগে থেকে পড়ে ছিল, সেই পাথরটিকে বাইরে থেকে আপাতদৃষ্টিতে পাথর মনে হলেও সেটি আসলে একটি পাহাড়ের অংশ আর সেই পাথরের গায়ে রয়েছে পর পর সাতটি প্রবেশপথ।
পরবর্তীতে যে, মানুষ এই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি গুহাপথকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল তা দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু এটি জানা সম্ভব হয়নি, কবে এবং কারা এই গুহাপথ ব্যবহার করত। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেরই দাবি, এমনকি যাদের পরিবারে এখনও বয়স্ক মানুষ আছেন তারা জানান, অতীতে ওই গুহাপথ ধরেই রাশিয়া থেকে মানুষ ভারতে আসা-যাওয়া করতেন।
লোকে মুখে শোনা কথা থেকে জানা গিয়েছে, মূলত সাত দরজা থাকাতেই এই পাথরের নাম ‘সাতবারন’। আর মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সাতটি পথের একটির অন্য প্রান্ত গিয়ে শেষ হয়েছে রাশিয়ায়। আর সেই বিশ্বাস থেকেই স্থানীয় এলাকার নাম হয়েছে কিলা-এ-রুশ বা কালারুশ। অর্থাৎ রুশদেশের কেল্লা।সুত্রের খবর, ২০১৮ সালে এই গুহার রহস্যভেদ করতে আমেরিকার ভার্জিনিয়া থেকে এসেছিলেন অ্যাম্বার এবং এরিক ফায়েস। এই দম্পতি অভিযাত্রী গুহার তিনটি প্রবেশপথ নিয়ে অনুসন্ধান করেন। এই দুই দম্পতির সাথে অভিযানে সাহায্য করেছিলেন ওহায়োর গুহাবিশেষজ্ঞ ডাস্টিন কিসনার এবং ভারতীয় অভিযাত্রী তথা দোভাষী ভামসি রামকৃষ্ণ এবং কেরলের এক জন ইঞ্জিনিয়ার।
বেশ কয়েকদিন টানা অনুসন্ধানের পর অভিযাত্রী দম্পতি জানান, তিনটির মধ্যে দু’টি গুহাপথে অতীতে যাতায়াত থাকলেও থাকতে পারে। প্রথম যেই গুহাটি রয়েছে সেটির যাত্রাপথ ক্রমশ উপরের দিকে উঠে গিয়েছে এবং দ্বিতীয়টি ক্রমশ নীচের দিকে নেমে গিয়েছে।
আর তৃতীয় গুহাপথের অনুসন্ধান শেষ করতে পারেননি দম্পতি। কারণ সেটি ভারতীয় সেনাবাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে বলে শোনা যায়। তিনটি গুহাপথেই প্রচুর পরিমাণে হিমালয়ের সজারুর খোঁজ পেয়েছিলেন তাঁরা। অভিযানের পরে নিজেদের গবেষণাপত্রে ফায়েস দম্পতি বলেছিলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তাঁরা শুনেছেন ওই পাথর নিছক পাহাড়ের অংশ নয়। বরং, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯০০ মিটার বা ৬২৩৪ ফুট উচ্চতায় সাতবারন আদতে একটি প্রাচীন মন্দির। যেখানে নাকি পুজো করতেন অজ্ঞাতবাসে থাকা পঞ্চপাণ্ডব। কিন্তু তা কতটা সঠিক তা এই মুহুর্তে আর জানা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের কথায়, পরবর্তীতে প্রাকৃতিক কারণে ওই মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বা, ধ্বংস করা হয়েছিল।
- Advertisement -
প্রথম গুহা সম্বন্ধে অভিযাত্রীরা জানিয়েছেন, “শুরু থেকে ৫০ মিটার দূরত্ব অবধি গুহাপথটি খাড়া হয়ে উঠে গিয়েছে। তার পর ১৫ মিটার সঙ্কীর্ণ পথের পরে রয়েছে একটি খোলা চত্বর। তার পর আরও ১০ মিটার সঙ্কীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আরও একটি খোলা জায়গা। আবার সেই খোলা জায়গা থেকে শুরু হয়েছে নতুন একটি পথ। সেটা ৫ মিটার অবধি গিয়ে আবার পড়েছে নতুন একটি করিডোরে। তবে ১৫ মিটার অবধি গিয়ে সেই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। “দম্পতিদের কথায়, “দ্বিতীয় গুহাপথটি সবথেকে প্রশস্ত। এই পথে প্রবেশ করার পরে ৫০ মিটার দূরত্ব অবধি উতরাইয়ে নামতে হয়। তার পর এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ।” বিভিন্ন ভূগোলবিদদের মতে, “ধস নেমে বা ভূমিক্ষয়ের ফলে এই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। “এই সাতটি গুহার মধ্যে তৃতীয় গুহাপথটি সবথেকে বেশি উচ্চতম। ৪০ মিটার উতরাইয়ে নামার পরে গুহাপথটি গিয়ে পড়ে একটি প্রশস্ত পথে। যদিও ২০ মিটারের পরে সেই পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
অভিযাত্রীদের মত, গুহার ভিতরের সব পথই কিছু দূর যাওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের সাহায্যে গুহাপথটি সম্পূর্ণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই গুহায় হিংস্র ভাল্লুক ডেরা বাঁধত এবং গ্রামে হামলা করত বলে অভিযোগ ছিল। তবে বর্তমানে হিমালয়ের সজারু ছাড়া আর কোনও প্রাণীর অস্তিত্ব মেলেনি সেখানে। অভিযাত্রীদের ধারণা, প্রথম ও দ্বিতীয় গুহাপথ হয়ত সুদূর অতীতে একসঙ্গে ছিল। কিন্তু আজ দু’টি-ই বন্ধ। এক দিকে ঢুকলে অন্য দিকে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। ফলে আবার ফিরে আসতে হবে প্রবেশপথের গুহামুখেই। যদিও ঐতিহাসিক কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু বলাবাহুল্য এই গুহা খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। এমনকি অনেকের মনে ধারণা ছিল এই গুহা দিয়ে জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করত। কিন্তু সাম্প্রতিক এই অনুসন্ধান পর সেই আশঙ্কাও দূর হয়ে গিয়েছে।